প্রিয় আব্বু,
মনের গহীনে জমে থাকা কিছু অব্যাক্ত কথা নিয়ে সাজিয়েছি তোমার জন্য লেখা এই চিঠি। জানিনা, না বলা কথাগুলো কতটুকু বলতে পারবো তবুও চেষ্টা করছি আর কি।
আব্বু, মনে আছে আমি যখন পিচ্চি ছিলাম, তখন তুমি খেয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সময় আমি তোমার পেটে মাথা রাখতাম। ভাবতাম তোমার পেটের ভেতর একটা দেশ আছে। তোমার কষ্ট হত কিন্তু আমাকে বাঁধা দিতে না। কি অবুঝ ছিলাম তাইনা? সেই আমি ই আজ কত বড়। তোমার হাত ধরে যেই আমি ছোট ছোট পায়ে স্কুলে যেতাম সেই আমি এখন একাই ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করি। সময় কত বদলে গেছে কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা সেই আগের মতই আছে। আমি তোমার চোখে এখন ও সেই পিচ্চি মেয়েই আছি।
কত সমস্যা, কত ঝামেলা তোমাকে বার বার জর্জরিত করেছে। কিন্তু তুমি আমার লেখাপড়া থামিয়ে দেওয়ার কথা কখনও কল্পনাও করনি বরং নিজের অপুর্ন সব স্বপ্ন যেন আমাকে দিয়ে পুরন হতে দেখেছো।
সামিজিক প্রেক্ষাপটে আমার মত শত শত মেয়ের এই বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে। পড়াশোনা থেমে গেছে চিরতরে। আমার বিয়েও হয়নি, পড়াশোনাও থামেনি। এসব কেবল তোমার জন্য ই আব্বু। তোমার সাপোর্ট না পেলে হয়ত সামনে আগাতে পারতাম না। জীবনে বহুবার ব্যার্থতা আমাকে কাবু করেছে। তুমি আমাকে বুঝিয়েছো জীবন কি। সামনে এগিয়ে যেতে হয় কিভাবে। ঠিক যেমন ছোটবেলায় সাইকেল চালানো শিখানোর সময় আমাকে একটু আগিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলে। আমি একবার পড়ালাম, দুইবার পড়ালাম তারপর ঠিক ই সাইকেল চালানো শিখে গেলাম।
তুমি আমাকে শিখিয়েছো কিভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়, কিভাবে একলা পথ চলতে হয়, কিভাবে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হয়। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ছায়া হয়ে থেকেছো তুমি, ভুল ধরিয়ে দিয়েছো, প্রয়োজনে বকা দিয়েছো আবার এই আমার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বহুবার বিসর্জন দিয়েছো নিজের সুখ, শখ, চাহিদা। প্রচন্ড অর্থকষ্টে থাকার পরও কখনো আমাকে বুঝতে দাওনি অভাব কি জিনিস।
আমার জন্য কত রাত তুমি নফল নামাজ পড়ে কেঁদেছ। কতদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গায়ে কাঁথা পেয়েছি তোমার দেয়া। মনে পড়ে আব্বু এস এস সি’র আগে প্রতিদিন ভোরে আমি পড়তাম আর তুমি আমার জন্য কফি বানিয়ে দিতে। কোনদিন ডিম দিয়ে পাউরুটি ভেজে দিতে, কোনদিন সেমাই রান্না করে দিতে।
আব্বু, তুমি আমার জন্য যা করেছো বা করে যাচ্ছো তার শতভাগের একভাগ ও হয়ত আমি তোমার জন্য করতে পারিনি। তবুও, আমার কোন অর্জনে যখন তোমার ঠোটের কোনে হাসি ফোটে তখন জীবন সার্থক মনে হয়। আমার দেয়া শার্টটা পরে যখন তুমি অফিসে যাও, পুরোটা পথ চোখ জুড়িয়ে তোমায় দেখতে ইচ্ছে করে। তোমার এই মেয়েকে নিয়ে যখন তুমি গর্ব কর তখন চোখের কোনে জল জমে গড়িয়ে পড়ে। এ জল ভালোবাসার জল। তোমার জন্য ভালোবাসা আব্বু। আমৃত্যু যেন তোমার ছায়া পাই আমার পাশে, তোমার দোয়া যেন সবসময় আমার উপর বর্ষিত হয়। আমি জানি, আমি পারবো। তোমার যোগ্য সন্তান আমি হবোই হব।
ইতি,
তোমার
আদরের ছোট্ট মিতু।
বাবা দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা সকল বাবার প্রতি। সকল বাবা আমৃত্যু বেঁচে থাক সকল সন্তানের হৃদয়ে।